Tags: ড. ইউনুস এখন কোথায়?, নাঈমুল ইসলাম খান
[২] আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস এডিটর নাঈমুল ইসলাম খান বলেছেন, ড. ইউনুস কে নিয়ে গত কিছু দিন কোনো আলাপ আলোচনা নেই। আপনারা আবশ্যই লক্ষ্য করে থাকবেন। এটা এমন কেনো হলো? নাইম ভিশনে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, ড.ইউনুসের বিষয়গুলো যেভাবে সংগঠিত করা হয়েছে, তার গোড়াতেই কিছু ‘উইথড্রল সিমটম’ দেখা দিয়েছিল অর্থাৎ তারা যতোটা বলে ছিলো তারা সেভাবে পরবর্তীতে আর কন্টিনিউ করেনি। সূত্র: নাইম ভিশন, আমাদেরসময়.কম
[৩] তিনি বলেন, যেমন সব থেকে বেশি ডকুমেন্টেন্ড হলো, নোবেল লরিয়েট সহ এতোজন মানুষ যে বিবৃতি দিলেন, সে বিবৃতিতে লেখা ছিলো ৩১শে আগস্ট তাদের এই বিবৃতিটা নিউ ইয়র্ক টাইমসে ছাপা হবে এবং সেই স্পেসটা তাদের বুক করা আছে। এতোটা ডিটেইলে সেখানে তারা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি এই বিবৃতি প্রকাশের পর ৩১শে আগস্ট সেটি কিন্তু আর নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়নি। এটা কিন্তু একটা বড় ধরনের ব্যাত্যয়।
[৪] এই জন্য যে তারা নিজেরাই বলেছিলেন এবং ঘোষণা দিয়েছিলেন যে এটি ছাপা হবে, কিন্তু এটি ছাপা হয়নি। তারা এর জন্য কোনো কারণও বর্ণনা করেননি। আমাদেরকে জানাননি কেনো এটা ছাপা হলো না। আমি সংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি প্রথমেই হয়তো নিউইয়র্ক টাইমস বিবৃতির ভেতরে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে, বেআইনীভাবে যে শাসানো হয়েছিলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে এইগুলো নোবেল বিজয়ীদের মতো বিশিষ্ট মানুষদের সাথে, বিশেষ করে ড. ইউনুসকে নিয়ে যখন তাদের মূল আগ্রহটা ছিলো, ড. ইউনুসের ভালো চাওয়া, তার নিরাপত্তা, তার বিরুদ্ধে যে মামলা হচ্ছে, এই মামলাগুলোতে যানো অবিচার না হয়, এই যে কনসার্নগুলো, তার বাইরে গিয়ে একটা দেশকে টেনে আনা, একটা স্বাধীনদেশকে রীতিমতো তার আইনী প্রক্রিয়ার ব্যপারে সতর্ক নয়, হুমকি দেয়ার মতো করে বলা হয়েছে।
[৫] তারপর আবার গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন এই সমস্ত বিষয়গুলো এর মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে। এটা খুবই অস্বাভাবিক ছিলো। দ্বিতীয় করণটি হলো আমার যেটা মনে হয় যাদের নাম এই বিবৃতিতে যুক্ত আছে তাদের কেউ কেউ হয়তো প্রশ্নও তুলে থাকতে পারেন, আর্গানাইজারদের কাছে যে আমরা যে বিবৃতি দিলাম তার মধ্যে এই বিষয়গুলি নিয়ে আসা ঠিক হয়েছে কিনা, আমরা একটা দেশের রাজনীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন এই সমস্ত বিষয়ে আমাদের বক্তব্য দেয়া বা যুক্ত হওয়াটা সমুচিত কিনা, এই নিয়ে হয়তো তারা কেউ কেউ, সবাই না হলেও আনেকেই হয়তো প্রশ্ন তুলেছেন।
[৭] এই সমস্ত কারণে নিউইয়র্ক টাইমসে বিষয়টি ছাপা হতেও দেখলাম না এবং তাদের কেউ আর দেখলাম না পরবর্তীতে কিছু বলতে। এই বিবৃতিতে তারা এক ধরনের দিক-নির্দেশনার মতো দিয়েছিলেন যে তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাবেন, এই মামলাটা যেনো স্থগিত করা হয়। তারা এসে এইখানে বিচার বিশ্লেষণ করবেন ইত্যাদি। তাদের সংশিষ্ট আইনজীবি এবং যোগ্য মানুষ পাঠাবেন তারা।
[৮] খুব ইন্টারেস্টিং হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু একটি প্রকাশ্য প্রেস করফারেন্সে তাদের এই বক্তব্যের সাথে প্রায় একমত হয়ে বলেছেন তারা যেনো তাদের প্রতিনিধি পাঠান, মামলার কার্যক্রম তারা যেনো পর্যবেক্ষণ করেন, সকল কাগজপত্র তারা এসে যেনো পরীক্ষা করেন এবং বিচার বিশ্লেষণ করে দেখেন যে কোনো বেআইনী কাজ করা হচ্ছে কিনা, অন্যায় করা হচ্ছে কিনা, জুডিশিয়াল হেরেসমেন্ট করা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি।
[৯] প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যটা অত্যন্ত সাহসী ছিলো। এই সাহসের পর আমার ধারণা ড.ইউনুসের পক্ষ থেকে এই বিবৃতিটি যারা অর্গানাইজ করছিলেন তারা একটু ঘাবড়ে গেছেন। ঘাবড়ে গেছেন এই জন্য যে যদি এইখানে একটা আন্তর্জাতিক টিম আসে, তারা যদি এখানে এসে ড. ইউনুস সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজগপত্র পরীক্ষা করতে যায় তাতে আরও নতুন নতুন বিষয় উন্মোচন হবে, ড. ইউনুসে যে বিশ^ব্যাপী মর্যাদা যার উপর ভিত্তি করে, যে তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ মানুষ, তিনি অত্যন্ত ফেয়ার মাইন্ডের মানুষ, ভেরি হাইমোরাল গ্রাউন্ডে তাকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তাদের আর্গানাইজারদের শঙ্কা হলো যদি ড. ইউনুস সম্পর্কিত যাবতীয় কাগজপত্র তাদের কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেয়া হয় তাহলে ড. ইউনুস সম্পর্কে তাদের ধারনা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে এবং পরিবর্তন হয়ে খারাপ দিকে চলে যেতে পারে।
[১০] এটাও একটা কারণ হয়ে থাকতে পারে, তারা প্রধানমন্ত্রীর এই আহবানে সাড়া দিলেন না, তারা তাদের নিজেদের ঘোষণা অনুযায়ী তাদের কাউকে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন সেটাও তারা ফলোআপ করেননি। তাদের বিবৃতিটি নিউ ইয়র্ক টাইমসে ছাপানোর কথা ছাপাননি। স্পেস বুকও করা ছিলো তারপরও তারা ছাপাননি। এইগুলো একটা রহস্য। এই ঘটনাগুলি থেকে আমরা লক্ষ্য করতে পারি, ড. ইউনুসের ব্যাপারে আমরা যে উৎসাহের জাগরণ দেখে ছিলাম সেটায় সম্ববত ভাটা পরেছে। সেই উৎসাহটা বর্তমানে আর নেই।
[১১] বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে ইন দ্যা মিন টাইম অনেক বড় বড় নিউজ চলে আসছে মিডিয়ার সামনে এমনকি সোশাল সিডিয়ার সামনেও। তার মধ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করলেন। এই সফরটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভারত এবং রাশিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মোস্ট সিগনিফিকেন্ট ভূমিকা পালন করেছে। সেই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করতে স্বাধীনতার ৫২ বছরেরও বেশি সময় লেগে গেলো। সুতরাং ল্যাভরভের এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো যখন পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের এক প্রকার ঠোকাঠুকি চলছে। এই পর্যয়ে ল্যাভরভ এসে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন যেভাবে ব্যক্ত করেছেন তা আমাদের মিডিয়া সহ নাগরিক সমাজে এটা ব্যাপক গুরুত্ব লাভ করেছে।
[১২] তারপর ছিলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জি-২০ সম্বেলনে অংশ গ্রহণ। জি-২০ সম্বেলনে অংশ গ্রহণ স্বাভাবিকভাবে যেটুকু নজর কাড়ার কথা, তার থেকে বহুগুণ বেশি নজর কেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে যেভাবে মার্যদা দিয়েছেন এবং পুতুলকে ও যে মর্যাদা দেখিয়েছেন এই ভালোবাসা, দরদ, মর্যাদার যে মিশেল তা সবার সামনে স্পষ্ট হয়েছে। সুতরাং এটাও আমাদের এইখানে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছে, যার কারণে ড. ইউনুসের আর সেইখানে কোন স্পেস ছিলো না।
[১৩] তারপরে আবার ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর ছিলো এভাবে আরও কিছু দিন চলে যাওয়ায় ড. ইউনুসের আর সেখানে স্থান পাননি। আমার ধারণা ড. ইউনুস আর কোনো বৈশ্বিক কারণ না ঘটলে আর আলোচনায় আসবে বলে মনে হয় না। মামলার অগ্রগতির সাপেক্ষে নিশ্চয় মিডিয়াতে নিউজ হতে থাকবে। মামলা সংক্রাস্ত কারণে তিনি মিডিয়াতে স্থান কিছুটা পাবেন অথবা বৈশ্বিক পর্যায়ে কোন কিছু ঘটলে।